সুজন তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি:
রাজশাহীর তানোরে নারীদের উচ্ছিষ্ট চুলের ব্যবসা বর্তমানে হাজারো পরিবারের জীবিকা নির্বাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।এই ব্যবসার মাধ্যমে চুল রপ্তানি হচ্ছে চিনসহ বিভিন্ন দেশে,যা নারীদের চুলের কেনা বেচার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।তানোর উপজেলার কামার গাঁ ও কলমা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গড়ে উঠেছে চুলের কারখানা,যেখানে কয়েক হাজার নারী ও পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।এছাড়া,চুল বেচা-কেনা ও সংগ্রহের কাজে হাজারো পুরুষের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায় হিসেবে পরিণত হয়েছে।তানোর উপজেলার চৌবাড়িয়া বাজারে গড়ে উঠেছে শতাধিক আড়ৎ,যা এই ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু।পাশের নওগাঁ জেলার মান্দা ও নিয়ামতপুরেও চুলের ব্যবসা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।বর্তমানে চুলের কেজি সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।তানোরের চৌবাড়িয়ায় সপ্তাহে ছয়দিন চুলের হাট বসে,যেখানে প্রতি দিন অন্তত ৩লাখ টাকার চুলের বেচাকেনা হয়।চুল ব্যবসায় জড়িতরা জানান,নারীরা সাধারণত আচড়ানোর পরে যে চুল সংরক্ষণ করেন,সেগুলো ফেরিওয়ালারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করেন।এরপর এই চুলগুলো প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়,যেখানে চুল পরিষ্কার করে বাছাই করা হয়।প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র থেকে বাছাই করা চুল চৌবাড়িয়া হাটে নিয়ে আসা হয়।মঙ্গলবার বাদে সপ্তাহে ছয়দিনই হাট বসে,যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা চুল কিনতে আসেন।বাংলাদেশ থেকে চুল রফতানি হচ্ছে চীন,ভারত,শ্রীলংকা,মায়ানমার, ভিয়েতনাম, জাপান ও কোরিয়ায়।এই চুল বটিচুল,পরচুলা এবং অন্যান্য সৌখিন জিনিস তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের চুলের চাহিদা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।তানোর উপজেলার মাদারীপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে ৮টি চুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে,যেখানে কর্মরত নারীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।চুলের জট ছাড়ানোর কাজে নিয়োজিত নারী কর্মী সাবিনা বেগম বলেন,তাদের কাছে আসা চুল থেকে নোংরা ও জট বাঁধা চুল আলাদা করেন। এরপর জট ছাড়ানো হয়।কারখানার পুরুষ কর্মীরা চুল গুলো পরিষ্কার করেন এবং রোদে শুকিয়ে ধাপে ধাপে আলাদা করে বিক্রির উপযোগী করেন।প্রত্যেক নারী কর্মী দৈনিক ১শ’২০টাকা করে মজুরি পান,যা দিয়ে তারা সংসার চালানোর পাশাপাশি সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনছেন।আরেক নারী কর্মী নিপা বেওয়া জানান,সারাদিন একটানা বসেই কাজ করতে হয়।মাদারীপুরের একটি চুল প্রক্রিয়া জাত করণ কেন্দ্রের মালিক সেলিম হোসেন জানান,ফেরিওয়া লাদের কাছ থেকে তারা ১ কেজি চুল ৩হাজার ৫শ’ টাকা কেজি দরে কিনে থাকেন।প্রক্রিয়া জাতকরণের পর ১ কেজি চুলের ওজন হয় ৬শ’৫০ গ্রাম।তারা সেই চুল প্রতি কেজি ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। তবে ১২ ইঞ্চির বেশি লম্বা চুল সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। চৌবাড়িয়া হাটের চুল ব্যবসায়ী রায়হান আলী জানান, তানোর নিয়ামতপুর ও মান্দা উপজেলায় গড়ে ওঠা প্রক্রিয়া জাতকরণ কেন্দ্রগুলো থেকে চুল আসে এ হাটে।তবে, পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় এখনও এ অঞ্চলে চুল ব্যবসা আলাদা শিল্প হিসেবে গড়ে ওঠেনি বলে মন্তব্য করেছেন তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিন প্রামাণিক।অন্যদিকে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিয়াকত সালমান বলেন,এটি সম্ভাবনাময় একটি খাত।এতে যুক্ত হয়ে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নতি হচ্ছে।তিনি উল্লেখ করেন,সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ ও অন্যান্য সুবিধা পেলে এ খাত অনেক দূর এগিয়ে যাবে।