
ইয়াছিন শরীফ,
নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালী সোনাইমুড়ী থানার বজরা ইউনিয়নের ইসলামগঞ্জ বাজারে টিটুর হোন্ডা গ্যারেজে র্যাব-১১ ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানী-৩, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মিঠুন কুমার কুন্ডুর স্বাক্ষরীত প্রেস রিলিজের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন এবং অভিযান চালিয়ে একটি এল জি উদ্ধার সহ অস্ত্রধারী ও অস্ত্র ব্যবসায়ী হাবিব টিটুকে গ্রেপ্তার করেছে। এই ঘটনায় সোনাইমুড়ী থানায় অস্ত্র আইনে মামলা রুজু হয়েছে।
মামলা ও র্যাব সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রবিবার ২০ই এপ্রিল’২০২৫ তারিখ রাত আনুমানিক ৮.১০ ঘটিকার সময় বিভিন্ন অপরাধী গ্রেপ্তার, মাদক, সাজা প্রাপ্ত আসামী,ধর্ষনকারী,অস্ত্র উদ্ধার সহ বিভিন্ন অপরাধের উৎস উদঘাটনে র্যাব-১১ ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানী-৩ এর আভিযানিক দল সোনাইমুড়ী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা কালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বজরা ইসলামগঞ্জ বাজারে কাতার মসজিদ সংলগ্ন ফোর লেন পাকা সড়কের পূর্ব পাশে খালের উপরে হোন্ডা গ্যারেজে অভিযান পরিচালনা করে হাবিব টিটু(২৮),পিতা- মৃত রুহুল আমিন, মাতা-কাঞ্চন বেগম,গ্রাম-বারাহিনগর(দর্জি বাড়ি)০৭ নং বজরা ইউনিয়ন, থানা- সোনাইমুড়ী,জেলা-নোয়াখালীর হেফাজত হতে একটি দেশীয় তৈরি এলজি উদ্ধার সহ তাকে গ্রেপ্তার করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত হাবিব টিটু থানা এলাকার ৮ নং সোনাপুর ইউনিয়নের জাকির বাহিনীর অন্যতম অস্ত্রধারী সক্রীয় সদস্য ছিল। ৪/৫ বছর আগে অস্ত্রধারী জাকির বাহিনীর প্রধান জাকির র্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে থাকাকালে স্থানীয় বজরা এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী শাহাদাত হোসেন জনি গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসাবে হাবিব টিটুর অবস্থান তৈরি করে। শাহাদাত হোসেন জনির সহচার্য্যে এলকার বিভিন্ন বখাটে কিশোর যুবকদের নিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র সৃষ্টি করে। মূলত এই চক্রের কাজ অস্ত্রের মহড়ায় চাঁদাবাজি,ছিনতাই,ডাকাতি,দস্যুতা,ভূমি দখল সহ অপহরন করে মুক্তিপন আদায় করা তাদের কাজ। বজরা গ্রামের ইউসুফ মির্জা, রকু মেম্বারের ছেলে বারাহিনগরের সাঈদ আনোয়ার,সাহেদ ওরফে কাউন্টার সাহেদ (যার বিরুদ্ধে ২০২০ সনে ডাকাতি মামলা রয়েছে),সোহেল ওরফে বারি সোহেল পূর্ব চাঁদপুর গ্রামের, শাহাদাত হোসেন জনি (যার বিরুদ্ধে জাফর হত্যার অভিযোগ সহ বেশ কয়েকটি মামলা বিচারাধীন আছে)তার ভাই সাহেদুজ্জামান আকবর ওরফে টিপু, মামুন কন্ট্রাক্টরের ছেলে সাকিব,মোল্লা বাড়ির রায়হান, চকিদার বাড়ির ইয়াছিন। উত্তর রসুলপুর আসলাম ব্যাপারী বাড়ির জহির, মিরালীপুর বারিক মুন্সী বাড়ির জুয়েল, ফয়েজ মেম্বারের ছেলে মানিক, সাকেরপুর মহাজন বাড়ির রাহাত,ছনগাঁও এলাকার পাগলা আজিজ ওরফে আব্দুল আজিজ, দীঘির পাড় বাড়ির ডন শহীদ সহ এই অস্ত্রবাজ চক্রে বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৩০/৩৫ জনের সক্রীয় সদস্য রয়েছে।
গত ৫/৬ বছর থেকে হাবিব টিটু বজরা এলাকাসহ থানা এলাকার ৮ নং সোনাপুর, ৯ নং দেওটি,১০ নং আমিশাপাড়া ইউপি এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী বেগমগঞ্জ থানা এলাকার নরোত্তমপুর মিরালীপুর,আপানিয়া,গোপালপুর ইউনিয়নের তালুয়া চাঁদপুর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় দেড় শতাধিক অস্ত্র বিক্রি করার গুঞ্জন রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত হাবিব টিটু কথিত ও নাম সর্বস্ব পেশায় হোন্ডা মেকানিক্সের কাজ করায় জেলার বিভিন্ন এলাকার অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত মোটর সাইকেল মেরামত ও রেজিস্ট্রেশন বিহীন চোরাই মটর সাইকেল কেনাবেচার এজেন্ট হিসাবে কাজ করায় তার সাথে জেলার বিভিন্ন এলাকার সন্ত্রাসীদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠায় অস্ত্র বেচা কেনায় বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। গত ৫/৬ মাস পূর্বে সোনাইমুড়ী থানা এলাকায় অস্ত্র ও চোরাই মোটর সাইকেল নিয়ে হাবিব টিটু ও রায়হান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হলেও তিন লক্ষ টাকায় আপোষ রফায় ঘটনাটি অন্ধকারে চাপা পড়ে যায়। স্থানীয় কতেক প্রভাবশালী তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে। এই চক্রের কেউ কোথাও কোন সমস্যা কিংবা আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর হাতে আটক হলে তদবীর ও দেন দরবারে লিপ্ত হয়। টিটু অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই জনৈক যুগ্ন সচিবের ভগ্নিপতি ও বাজারের এক মুদী ব্যবসায়ী এবং বারাহীনগরের মহসীন স্বপন নামীয় দুই জন লোক টিটুকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও বিভিন্ন স্থানে ফোনে যোগাযোগ করতে স্থানীয়দের নজরে পড়ে। এমনকি পরদিন সকালে র্যাব কার্যালয়ে তাদের যাওয়ার বিষয়ে গুঞ্জন রয়েছে। ২০ এপ্রিল রাতে হাবিব টিটুর গ্যারেজে আইন শৃংখলা বাহিনীর অভিযান হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে শাহাদাত হোসেন জনি, রায়হান ও তাদের একই দলীয় কয়েক জন সশস্ত্র অবস্থায় মোটর সাইকেল যোগে ইসলামগঞ্জ বাজার ব্রীজ পর্যন্ত এসে র্যাবের অভিযানের কথা শুনে পিছু হটে। অস্ত্রবাজ ও তাদের উৎস সংক্রান্তে তথ্য সংগ্রহ কালে স্থানীয় বেশ কয়েক জন আলোচনায় প্রশ্ন তুলে বলে যে, অস্ত্রের কি চোখ-পা আছে? যে নিজে নিজে চলে কখনও বাঁশ ঝাড়, কবরস্থান,খাল পাড়ে,লাকড়ি ঘর কিংবা চয়েজ করা স্থানে অবস্থান নিবে?অবশ্যই কেউ না কেউ অস্ত্র বহন করে নিরাপদে রাখে,পরবর্তীতে কোন না কোন সূত্রে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উদ্ধার কালে পরিত্যক্ত হিসাবে উদ্ধার দেখানো হয়!এ বিষয়ে মামলা হলেও প্রকৃত দোষী বা অস্ত্র বহনকারী,হেফাজতকারী কাউকেই চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হয় না বলেই এলাকা জুড়ে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও বেচা কেনা বেড়েই চলছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে,স্থানীয় ও বাজারের কয়েক জন ব্যবসায়ী জানান, সম্প্রতি ৮ ফেব্রুয়ারি’২৫ বজরা নাটেশ্বর সীমান্তের বেচা গাজীর বাড়ির সামনে যুবদল নেতা মিজানকে এই চক্রের লোকজন প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা চেষ্টা চালায়। এ বিষয়ে মামলা হলেও আইন শৃংখলা বাহিনী আজও অস্ত্রধারী চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার ও ঐ ঘটনাকালে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি। তাছাড়া ১১ই এপ্রিল’২৫ বারাহিনগর এছাক ব্যাপারীর বাড়ির সামনে প্রতিবেশী ফয়েজ মেম্বারের ছেলে মানিক এবং একই দলীয় জুয়েল সহ শাকিলকে গুলি করে বীরদর্পে চলে যায়। তা নিয়ে এলাকায় তোড়পাড় হলেও আইন শৃংখলা বাহিনী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারে এখনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারেনি।