নোয়াখালীতে অটোরিকশা চালক হত্যার রহস্য উদঘাটন, প্রধান আসামি গ্রেফতা
ইয়াছিন শরীফ অনিক,
নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর সোনামুড়ীতে বহু আলোচিত অটোরিকশা চালককে নির্মমভাবে হত্যা করে রিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনার প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করেছে সোনাইমুড়ী থানা পুলিশ। তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর আসামির স্বীকারোক্তিতে উদ্ধার করা হয়েছে ভিকটিমের অটোরিকশার ৪টি ব্যাটারি।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সোনাইমুড়ী থানায় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন চাটখিল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মনীষ দাস।
পুলিশ জানায়, অটোরিকশা চালক রাহেদ হোসেন (১৮) কে গত ২ মে ২০২৫ ইং তারিখে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে ছিনতাইকারীরা। ১৯ মে সকালে জয়াগ ইউনিয়নের নোয়াখালী ঢাকা মহাসড়কের পাশে আবদুল আউয়ালের একটি ডোবায় কচুরিপানার নিচ থেকে গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরিবার থেকে খবর পেয়ে রাহেদের বাবা ইউসুফ কামাল এসে লাশ শনাক্ত করেন। পরে তিনি বাদী হয়ে ২৫ মে ২০২৫ইং তারিখে সোনাইমুড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (এফআইআর নং-২৮, ধারা ৩৩৮/৩০২/২০১/৩৪)।
ঘটনার প্রায় চার মাস পর, তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণ ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোনাইমুড়ী থানার ওসি মোরশেদ আলম এর দিকনির্দেশনায় এএসআই জাহাঙ্গীর আলম সঙ্গীয় ফোর্সসহ ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ডেমরা থানাধীন সারুলিয়া বাজারের আমতলা এলাকা থেকে মূল আসামি মো. শাহাদাত হোসেন সবুজ ওরফে মানিক (১৯) কে গ্রেফতার করেন।
গ্রেফতারকৃত মানিক লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার নন্দীগ্রাম এলাকার বাসিন্দা এবং মাসুদ আলমের ছেলে।
গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে শাহাদাত হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে এবং তার দেওয়া তথ্যমতে রাত সাড়ে ৩টায় সোনাইমুড়ী উপজেলার নদনা ইউনিয়নের পাঁচবাড়িয়া এলাকার রুবির বিল্ডিংয়ের পূর্ব পাশে হারুনের একটি ডোবা থেকে ভিকটিমের চালিত মিশুক অটোরিকশার চারটি পুরাতন মরিচাধরা ব্যাটারি উদ্ধার করে পুলিশ।
এই মামলার এজাহারভুক্ত ২ নম্বর আসামি মো. সাইফুল ইসলাম বাবুকেও পুলিশ ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এটি একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র, যারা নতুন ও তরুণ চালকদের টার্গেট করে গাড়ি ছিনতাই করে থাকে।
পুলিশ জানায়, শাহাদাত হোসেন সবুজ ওরফে মানিকের বিরুদ্ধে এর আগেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানায় মামলা রয়েছে। অতীতে চুরি ও ছিনতাই সংক্রান্ত একাধিক ঘটনার সাথেও তার সম্পৃক্ততা রয়েছে।
এ ঘটনা এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। নিহত রাহেদের পরিবার দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছেন।নোয়াখালী জেলা পুলিশ আশ্বস্ত করেছে এই চক্রের সকল সদস্যকে আইনের আওতায় আনা হবে।
সহকারী পুলিশ সুপার মনীষ দাস বলেন, সোনাইমুড়ীতে ঘটে যাওয়া এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল। তথ্যপ্রযুক্তি ও মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দা কার্যক্রমের সফল সমন্বয়ের ফলেই মূল আসামিকে গ্রেফতার এবং আলামত উদ্ধার সম্ভব হয়েছে। তিনি আরও জানান, চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।