দলীয়কর্মী হত্যার আসামি
তানোরে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি, এমপি প্রার্থীর প্রতি ক্ষোভ অসন্তোষ
তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি :
রাজশাহীর তানোরে বিএনপির দলীয়কর্মী গানিউল হত্যার দায়ে বহিষ্কৃত পাঁচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রভাষক মজিবুর রহমান তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতির পদ আঁকড়ে ধরেছেন। এজন্য স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও অসন্তোষ। সম্প্রতি রোববার ২৮ সেপ্টেম্বর হতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব শুরু হয়েছে। ফলে উপজেলার ৫৮টি পূজামন্ডপে শুরু হয়েছে উদযাপন। এসব পূজামন্ডপে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও রাজশাহী-১ আসনের এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশি মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিন। তার সঙ্গে দেখা যাচ্ছে হত্যার মামলার আসামী ও বিএনপি হতে বহিস্কৃত নেতা মজিবুর রহমান।
অভিযোগ উঠেছে, জেলা ও উপজেলা আর ইউনিয়ন পর্যায়ের শীর্ষ কয়েকজন নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বহিষ্কৃত নেতা মজিবুর নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছেন। বহিস্কার হয়েও দলীয় কর্মসূচিতে তিনি সামনের সারিতে থাকছেন। তাই ত্যাগী নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন দল ও পদ থেকে বহিষ্কৃত নেতা মজিবুরকে তিরস্কারের বদলে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি করে পুরুস্কৃত করা হয়েছে। আর নিহতের পরিবারকে দল থেকে ছিটকে ফেলা হচ্ছে। কোন সভা সেমিনার ও সমাবেশে স্থান দেয়া তো দূরের কথা এড়িয়ে চলা হচ্ছে বলে আক্ষেপ করে তানোর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এমএ মালেক মন্ডল বলেন- বহিষ্কারের পরও দলীয় কর্মসূচিতে শুধু প্রভাষক মজিবুর নয়, বহিস্কৃত নেতা একই হত্যা মামলার প্রধান আসামী মিজানুর রহমান মিজানের অংশগ্রহণে আমরা বিব্রত।
তিনি আরও বলেন, তানোরে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএনপি দল ও পদ থেকে বহিস্কৃত নেতা মজিবুর তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হন কিভাবে। তিনি আলোচিত হত্যা মামলার আসামী হলেও তাকে সম্প্রতি কৃষ্ণপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রী কলেজে নিয়মিত কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। এছাড়াও চলতি বছরের দুই ফেব্রুয়ারী চাঁদপুর দ্বিতীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে ছয় মাস মেয়াদে এডহক কমিটির সভাপতি করা হয় তাকে। কিন্তু ৬ মাস পরও নিয়মিত কমিটি হয়নি। অবৈধ কমিটির স্বাক্ষরে বিল বেতন উত্তোলন করছেন শিক্ষকরা। এছাড়াও দুবইল উচ্চ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি করা হয় বহিষ্কৃত নেতা মজিবুরকে। এই কমিটির মেয়াদ থাকলেও নিয়মিত কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এজন্য ক্ষোভে আবেগে ফেটে পড়ছেন ওই এলাকার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বলে জানান এই ছাত্র নেতা।
এব্যাপারে তানোর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হযরত আলী মাস্টার ও জ্যেষ্ঠ বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ক্ষুণ্ন হচ্ছে দলের ভাবমূর্তি। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের কাছে ভুল মেসেজ যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের মনেও বিএনপি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। এরপরও দলের সভা ও সমাবেশ মঞ্চে বহিস্কৃতদের পাশে নিয়ে রাজশাহী-১ আসনের এমপি মনোনয়নপ্রত্যাশি মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিন সভা ও সমাবেশ করছেন। এসব ছবি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বিএনপির মাঠপর্যায়ের কর্মকমান্ড। এছাড়াও বহিস্কৃত নেতাদের ক্ষমতার দাপটে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে তাদের ক্যাডার বাহিনী। এমন অপ্রতিরোধ্য ক্যাডার বাহিনী বেপরোয়া হয়ে উঠলেও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে কোন উদ্যোগ নেই মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিনের বলে আক্ষেপ করেন দলের বিপুল সংখ্যক ত্যাগী নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এব্যাপারে মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিনের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন রিসিভ হয়নি। এজন্য কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে, এবিষয়ে বহিষ্কৃত নেতা মজিবুর রহমান বলেন, দলের নীতি-নির্ধারক ব্যক্তিরা তাকে যোগ্য মনে করে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পাইয়ে দিয়েছেন। এজন্য তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দলের উন্নয়নে কাজ করছেন। কাজের মাধ্যমেই তার বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার হবে বলে আশাবাদী তিনি।
প্রসঙ্গ, গত ১১ মার্চ মঙ্গলবার পড়ন্ত বিকেলে রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির এক ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রাজশাহী-১ আসনের এমপি মনোনয়নপ্রত্যাশি মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিনকে বরণ করতে গিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাধেঁ। ওই সংঘর্ষে বিএনপির কর্মী সমর্থক গানিউল হক মারাত্নক গুরুত্বর আহত হন। পরদিন ১২ মার্চ বুধবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ওই ঘটনায় নিহত গানিউলের ভাই পাঁচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মোমিনুল হক মমিন বাদি হয়ে মোট ৩৭ জনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয় ৫০ থেকে ৬০ জনকে। মামলায় বহিস্কৃৃত নেতা মিজানকে হুকুমের প্রধান আসামি করা হয়। তার বাড়ি তানোর সদরের গুবিরপাড়া গ্রামে। দ্বিতীয় আসামি পাঁচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মুজিবুর রহমান। তার বাড়ি কোয়েলহাট গ্রামে। তিনি পেশায় কয়েলহাট কলেজের প্রভাষক। মূলত তারই নেতৃত্বে অনুষ্ঠানে সংঘর্ষ বাধে। এঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামীরা জামিনে আছেন। কিন্তু এতদিনেও অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেননি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার ওসি আফজাল হোসেন। কিন্তু এব্যাপারে তিনি বলেছেন সময় মতো তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হবে।