তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্বে বহিষ্কৃত নেতা, এমপি প্রার্থীর সঙ্গে দেখা যাওয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ রাজশাহীর তানোরে বিএনপির দলীয়কর্মী গানিউল হক হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ও দল থেকে বহিষ্কৃত পাঁচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রভাষক মজিবুর রহমান তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। এ ঘটনায় স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
সর্বশেষ হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোনয়ন প্রত্যাশী মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিনকে অভিনন্দন জানাতে দেখা গেছে। তার সঙ্গেই উপস্থিত ছিলেন হত্যা মামলার আসামি ও বহিষ্কৃত নেতা মজিবুর রহমান।
স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সমর্থনে মজিবুর রহমান স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছেন। দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়া সত্ত্বেও তিনি দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। এ অবস্থায় অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছেন, “দুর্নীতি ও হত্যার অভিযোগে জড়িত থাকার পরও মজিবুর রহমানকে তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি করা হয়েছে, যা একপ্রকার পুরস্কার হিসেবেই দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে, নিহতের পরিবারকে দলীয় কার্যক্রম থেকে দূরে রাখা হচ্ছে।”
তানোর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এমএ মালেক মন্ডল জানান, “বহিষ্কারের পরও দলীয় কর্মসূচিতে মজিবুর রহমান ও একই হত্যা মামলার প্রধান আসামি মিজানুর রহমান মিজানের উপস্থিতি আমাদের জন্য বিব্রতকর।”
বর্তমানে তানোরে আলোচিত এক বিষয় হলো, হত্যা মামলার আসামি ও বহিষ্কৃত নেতা হয়েও মজিবুর রহমান কীভাবে তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হলেন। সম্প্রতি তাকে কৃষ্ণপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের নিয়মিত কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। এছাড়া চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর দ্বিতীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে ছয় মাসের জন্য অ্যাডহক কমিটির সভাপতি নিযুক্ত হন তিনি, কিন্তু ছয় মাস পরও নিয়মিত কমিটি গঠন করা হয়নি। শিক্ষকরা অবৈধ কমিটির স্বাক্ষরেই বেতন ও বিল উত্তোলন করছেন। এছাড়া দুবইল উচ্চ বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি। নিয়মিত কমিটি গঠনে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
এ প্রসঙ্গে তানোর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হযরত আলী মাস্টার ও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের বিতর্কিত কার্যকলাপ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের মনে দল সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা গড়ে উঠছে।”
তারা আরও জানান, বহিষ্কৃত নেতাদের সঙ্গে এমপি মনোনয়নপ্রত্যাশী মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিনের সভা-সমাবেশে অংশ নেওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে, যা দলের মাঠপর্যায়ের নেতৃত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এছাড়া বহিষ্কৃত নেতাদের প্রভাবেই তাদের ক্যাডার বাহিনী অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলেও, এ বিষয়ে শরীফ উদ্দিনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে আক্ষেপ প্রকাশ করা হয়।
এ বিষয়ে মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিনের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, বহিষ্কৃত নেতা মজিবুর রহমান দাবি করেন, “দলের নীতিনির্ধারকরা আমাকে যোগ্য মনে করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি প্রতিষ্ঠান ও দলের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আমার বিশ্বাস, কাজের মাধ্যমেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে।”গত ১১ মার্চ তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হওয়ার সময় মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিনকে বরণ করতে গিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে স্থানীয় বিএনপি কর্মী গানিউল হক মারাত্মক আহত হন এবং পরদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনায় নিহতের ভাই মোমিনুল হক মমিন ৩৭ জন নামযুক্ত ও ৫০ থেকে ৬০ জন অজ্ঞাত আসামি করে হত্যার মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় মিজানুর রহমান মিজান ও দ্বিতীয় আসামি করা হয় মজিবুর রহমানকে। বর্তমানে আসামিরা জামিনে রয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার ওসি আফজাল হোসেন সময় মতো তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার কথা বলেছেন।