শ্রীপুরে প্রবাসীর স্ত্রীকে হত্যার অভিযো
শ্রীপুর গাজীপুর প্রতিনিধি:
গাজীপুরের শ্রীপুরে এক সৌদি আরব প্রবাসীর স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার রাজাবাড়ী ইউনিয়নের বিন্দুবাড়ি গ্রামের আ. জলিলের বাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ইতি আক্তার (২১) নামের ওই নারীকে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা।
ইতি আক্তার কাপাসিয়া উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ঘিঘাট গ্রামের মো. বিল্লাল হোসেনের মেয়ে। পাঁচ বছর আগে শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের বিন্দুবাড়ি গ্রামের আ. জলিলের ছেলে মো. আক্তার হোসেনের সাথে তার বিয়ে হয়। তাদের আড়াই বছরের আফরিন নামে একটি মেয়ে রয়েছে।
ইতির স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের পর থেকে ইতিকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন নির্যাতন করতো। মেয়ের সুখের কথা ভেবে ইতির স্বামীকে শশুর বাড়ির টাকায় সৌদিতে পাঠানো হয়। তবু থামেনি শাশুড়ী-ননদের নির্যাতন। একাধিক বার ইতি নির্যাতিত হয়ে বাবার বাড়িতে চলে গেছে। তাকে বুঝিয়ে ফের স্বামীর বাড়িতে পাঠানো হতো। কিছুদিন পূর্বে এভাবে নির্যাতিত হয়ে ইতি বাবার বাড়ি চলে আসে। আক্তার দেশে ফিরে তাকে বুঝিয়ে বাড়িতে নিয়ে যায়। এক মাস পূর্বে আক্তার স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে আবার সৌদিতে চলে যায়। আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে স্বামীর বাড়ি থেকে ফোন করে জানায়- ইতিকে দেখতে হলে দ্রুত ওই বাড়িতে যেতে। ও বাড়িতে গিয়ে স্বজনরা ইতির মরদেহ বারান্দায় দেখতে পায়।
ইতির মা বিলকিছ অভিযোগ করে বলেন, আমাকে সকালে ফোন করে জানানো হয়- ইতিকে দেখতে হলে দ্রুত ওই বাড়িতে যেতে। আমি ছুটে গিয়ে বারান্দায় মেয়ের মরদেহ দেখতে পাই। সে আত্মহত্যা করলে ঝুলন্ত থাকতো। বাড়ির লোকজন লাশ নামালো কেন? আমার মেয়ে মরতে পারে না। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। এখন বলছে সে আত্মহত্যা করেছে।
ইতির ভাবী শারমিন অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের পর থেকে ইতির উপর শাশুড়ী- ননদ নির্যাতন চালাতো। সে একাধিকবার বাবার বাড়িতে চলে এসেছে। আমরা বুঝিয়ে তাকে স্বামীর বাড়িতে পাঠাতাম। সংসারের সুখের কথা ভেবে ইতির স্বামীকে শশুর বাড়ির টাকায় সৌদিতে পাঠিয়েছি। তবুও শাশুরী-ননদের নির্যাতন বন্ধ হয়নি। কিছুদিন পূর্বেও সে আমাদের বাড়িতে চলে এসেছিলো। তার স্বামী দেশে ফিরে তাকে বুঝিয়ে বাড়ি নিয়ে যান। স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে একমাস পূর্বে আক্তার সৌদি চলে যায়। আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ইতির ননদ মিনারা ফোন করে বলেন, ইতিকে দেখতে হলে দ্রুত ওই বাড়িতে যেতে। অন্য কিছু বলেনি। আমরা ছুটে ওই বাড়িতে গিয়ে ঘরের বারান্দায় ইতির মরদেহ দেখতে পাই। বাড়ির লোকজন বলে সে আত্মহত্যা করেছে। ঘরের আড়ায় উড়না ঝুলানো ছিলো। গলায় একটি চিকন দাগ রয়েছে। বাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে তাকে শ্বাস রোধে হত্যা করেছে। পরে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে। আমরা দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
ননদ মিনারা জানান, আমি কাজ করার সময় ভাবীকে ঘরে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। তখন বুঝিনি সে আত্মহত্যা করেছে। পরে দেখি সে ফাঁসিতে ঝুলে আছে।
দেবর আফজাল জানান, আমি ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজার সময় ভাবীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। কাছে গিয়ে দেখতে পাই সে ঝুলে আছে। আমরা দ্রুত তাকে ঝুুলন্ত অবস্থা থেকে নামাই। পরে দেখি সে মারা গেছে।
তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার এসআই মো. আক্রাম হোসেন জানান, খবর পেয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে বশত ঘরের বারান্দায় ওই নারীর মরদেহ দেখেতে পাই। ঘরের আড়ায় একটি উড়না বাঁধা ছিলো। মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হচ্ছে।
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনজার্জ মহম্মদ আব্দুল বারিক জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।