রাজনীতিতে যখন আদর্শের চেয়ে ব্যক্তি ও দলীয় সুবিধা মুখ্য হয়ে উঠেছে, তখন আত্মপ্রকাশ করল এক নতুন রাজনৈতিক সংগঠন—প্রগতিশীল জাতীয় কংগ্রেস (Progressive National Congress – PNC)। সংগঠনটি তার আত্মপ্রকাশের প্রথম দিনেই স্পষ্ট করেছে, তারা রাজনীতিকে ফিরিয়ে নিতে চায় মূল চেতনায়—আদর্শ, সমাজতন্ত্র, জনবাদ ও প্রগতিশীলতা।দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন সমাজচিন্তক ও লেখক আবুজর শিশির। সঙ্গে রয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান রাশি রায় চৌধুরী এবং মহাসচিব সাইদুর ইসলাম। এই নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে পিএনসি এক নতুন ধরনের রাজনৈতিক চর্চার ডাক দিয়েছে—যেখানে ক্ষমতা নয়, মানুষই হবে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু।
“আমরা ফিরে যেতে চাই মূল দর্শনে”—আবুজর শিশির
ঢাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের আত্মপ্রকাশ ঘোষণা করেন আবুজর শিশির। তিনি বলেন—
> “বাংলাদেশের রাজনীতি এক সময় আদর্শ, সংগ্রাম ও মানুষের অধিকারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতো। এখন তা হয়ে উঠেছে কিছু মানুষের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যম। আমরা সেই রাজনীতিকে ফিরিয়ে আনতে চাই, যেখানে মানুষ, মত, বিবেক এবং ভবিষ্যতের স্বপ্ন থাকবে।”
আবুজর শিশির জানান, দলটি চারটি মূল দর্শনকে সামনে রেখে গঠিত হয়েছে:
আদর্শ
রাজনীতিকে শুধুই ক্ষমতার কৌশল নয়, নীতিনিষ্ঠ চিন্তার মাঠ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যাশা।
সমাজতন্ত্র
সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সমাজতান্ত্রিক মূল্যবোধকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রগঠনের আকাঙ্ক্ষা।
জনবাদ
জনগণই হবে সকল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মূল নিয়ন্তা—এই বিশ্বাস থেকেই জনঅংশগ্রহণ ও গণতন্ত্রকে গুরুত্ব দেওয়া।
প্রগতিশীলতা
ধর্মনিরপেক্ষতা, বিজ্ঞানমনস্কতা, নারীর অধিকার, পরিবেশ এবং সংস্কৃতির চর্চা—এই সমস্ত বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান।
নেতৃত্বে নতুন চিন্তা, ব্যতিক্রমী প্রত্যয়
দলের ভাইস চেয়ারম্যান রাশি রায় চৌধুরী, যিনি দীর্ঘদিন ধরে নারী অধিকার ও নাগরিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত, বলেন—
> “বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর ভূমিকা আজও কাঠামোগতভাবে সীমিত। আমরা সেই বাধাগুলো ভাঙতে চাই। নেতৃত্বে নারীর সমান অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাই।”
মহাসচিব সাইদুর ইসলাম, একজন প্রগতিশীল সংগঠক হিসেবে পরিচিত, বলেন—
> “আমরা ভোটের রাজনীতি নয়, অংশগ্রহণের রাজনীতি চাই। জনগণ শুধু ভোটার নয়—তারা সিদ্ধান্তের অংশীদার। এই সত্য প্রতিষ্ঠাই আমাদের সংগ্রাম।”
শুধুই আরেকটা দল, না কি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা?
বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন দল গঠনের ঘটনা বিরল নয়। কিন্তু প্রগতিশীল জাতীয় কংগ্রেস নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে শুরু থেকেই। তারা বলছে, তারা ‘বিকল্প’ হতে চায় না, তারা চায় ‘ভিন্নতর’ হতে।
তাদের ভাষায়—
> “আমরা এক নতুন রাজনৈতিক বিবেকের সন্ধান করছি। যেখানে রাজনীতি হবে চিন্তার, ন্যায়ের, এবং ভবিষ্যতের।”
ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি
প্রগতিশীল জাতীয় কংগ্রেস দীর্ঘমেয়াদে তরুণ নেতৃত্ব গড়ে তোলা, রাজনৈতিক শিক্ষার সংস্কৃতি তৈরি, নীতিনিষ্ঠ বিরোধী দলীয় রাজনীতি এবং দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র পরিচালনায় ভূমিকা রাখতে চায়।
তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো — মাঠ পর্যায়ে সংগঠন গড়ে তোলা, জনসংলাপ তৈরি করা এবং আগামী নির্বাচনের বাইরে একটি সমান্তরাল রাজনৈতিক চেতনার ধারা গড়ে তোলা।
উপসংহার
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে প্রগতিশীল জাতীয় কংগ্রেস একটি নতুন সংযোজন। তারা কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এই মুহূর্তে তারা একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছে—
রাজনীতি কি ফিরে যেতে পারে নীতিতে, আদর্শে, মানুষের কথায়?
প্রগতিশীল জাতীয় কংগ্রেস সেই প্রত্যাবর্তনের দাবিদার হয়ে পথচলা শুরু করল।
দলীয় পরিচিতি সংক্ষেপে:
নাম: প্রগতিশীল জাতীয় কংগ্রেস (Progressive National Congress – PNC)
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান: আবুজর শিশির
ভাইস চেয়ারম্যান: রাশি রায় চৌধুরী
মহাসচিব: সাইদুর ইসলাম
মুল আদর্শ: আদর্শ, সমাজতন্ত্র, জনবাদ, প্রগতিশীলতা