ঘটনা দূর্ঘটনা ও একটি ক্যাপ
সাইদ গাজী,স্টাফ রিপোর্টার,
লেখার শিরোনামের ঘটনাটা খুবই স্বাভাবিক।
গতমাসের ৩০ তারিখ বিকেলবেলা।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ঘাটের নীলাদ্রী লেক থেকে কিছুটা দক্ষিণে সাদাপাথর নামের একটি ঝর্ণাধারা।
এটাকে ঝর্না বললে ভুল হবে কারণ মূল ঝর্ণাটি রয়েছে ভারতের ভূ-খন্ডে।
আমাদের সীমান্তে শুধু পাথুরে স্বচ্ছ জলধারা বয়ে যাচ্ছে। সেখানে আমাদের টিমের মধ্য থেকে কালাম স্যার,ভাতিজা দীদার আর আমি মিলে ঝিরিপথ বেয়ে এগিয়ে যাচ্ছি সামনের দিকে।
অল্পক্ষণ পরেই হাঁটার আগ্রহ হারিয়ে ফেললেন কালাম স্যার।
থেমে গেলেন তিনি। ভাতিজা দীদার,তরুণ বয়স।
আমার দেখাদেখি পিছু পিছু আসতে লাগলো।
যতই সামনে যাই ততই মনে হয় সৌন্দের্যের লোভনীয় পিপাসা আমাকে আরও সামনের দিকে নিয়ে যায়।
দুরন্ত কৈশরের দলছুট বেয়াড়াপনা আমাকে আরও সামনে যেতে বলে,আরও আরও সামনে।
গতি যেনো থামছেইনা।অবশেষে বিশালাকায় এক প্রস্তরখন্ডে বসে পড়লাম।
ক্লান্তি দূর হলো।
ঝর্ণার প্রবাহমান বারিধারা আমাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে আলতো করে।
কলকল শব্দ যেনো সুর তুলে দিলো পায়ের নিচ দিয়ে। ততক্ষণে দীদার চলে এসেছে আমার কাছাকাছি। আনন্দ ভাগগাভাগি করছি দু’জনে। মনে হচ্ছিলো এখানে বোধহয় আমরা দুজন ছাড়া কেউ কোনোদিন আসতে পারেনি।
একধরনের বিজয়ের নেশায় উন্মত্ত ছিলাম দুজন।
ভিডিও হলো, ফটোসেশান হলো চিৎ করে,কাত করে,বাঁকা করে সব পথেই।
সময়ের ডাক এলো। ফিরে আসতে শুরু করলাম।
দূর্ঘটনাঃ-
যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম সেখানে আসার আগেই দেখি
আমাদের বাইকচালক চিৎকার পেড়ে কী বলে যেনো আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। ইনশাল্লাহ, পানির শব্দ আর দূরত্বের কারণে আমরা তার কিছুই শুনতে পাচ্ছিলামনা।
যাইহোক,কাছাকাছি এসে যেটা শুনলাম এবং যেটা বুঝলাম। সেটার মর্মার্থ হলো,
এ পর্যন্ত যতটুকু অক্ষরজ্ঞান আমার হয়েছে তা নাকি সম্পূর্ণই ভুল শিখেছি।
আরও পরিষ্কার করে বলি,আমরা যে পর্যন্ত গিয়েছিলাম সেটা সীমান্ত পেরিয়েও বিপজ্জনক সীমানায় নাকি চলে গেছি।
বোকা নাদানের মত ড্রাইভারের বকা খাচ্ছি। সাথে অন্যান্য পর্যটকদের বিনা পয়সার ভর্ৎসনা শুনেই যাচ্ছি।
আমার হাতের ডানপাশেই ছিলো সীমানা নির্দেশক সাইনবোর্ড। সেটা আমার চশমাওয়ালা চোখে না পড়াটাই ছিলো বেআক্কেলী।
প্রিয় পাঠক,দুএকজন প্রমীলা পর্যটককে আমি বলতে শুনেছি, আমার নাকি শুধু চোখে নয় কানেও সমস্যা আছে। তারা নাকি সবাই চিৎকার পেড়ে আমাদেরকে পিছন থেকে বহুবার ডেকেছিলো,ফিরে আসতে।
আমার কানে না শোনার অপবাদটিও মাথা পেতে নিলাম। অথচ আমার কানের উপরও অগাধ বিশ্বাস আছে। আমি আস্তে কথা জোরে শুনি। অবশ্য জোরে কথা একটু আস্তেই শুনি।
আমার আবার জোরাজুরিতে আস্থা কম।
এবার শেষ কথায় আসি।
নীলাদ্রী লেকে যেতে যেতে ড্রাইভারকে বলালাম, আমার কী বিপদ হতে পারতো?
সে যেটা বললো,সেটা রীতিমত আতংকের। ওরা যেটা দেখতে পাচ্ছিলো,সেটা হচ্ছে বিএসএফ তাদের টহলঘর থেকে নাকি আমাদের দিকে অস্ত্র তাক করেছিলো। আমি বললাম,তাহলে ওরা গুলি করলোনা যে!
ও বললো আপনার মাথার ঐ ক্যাপটা ওরা ওদের বায়োনোকুলার দিয়ে দেখে পর্যটক হিসেবেই ধরে নিয়েছিলো। তাই গুলি করেনি হয়তো।
তবে গুলি করলে কিছুই করার ছিলোনা। লাশটা হয়তো দান করতো আমাদের।
পাহাড় আমার ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা পরম করুণাময়ের সৃষ্টিলীলার একাংশও বটে। হয়তো সে কারণেই এ যাত্রা রক্ষে হলো আমার, আমাদের।
বিষয়টা একান্তই গোপন রেখেছিলাম এতদিন। কেউ জানলে, বিশেষ করে অতি আপনজনেরা জানলে হয়তো আমার বাউন্ডুলে জীবন বন্দী হয়ে যাবে।
ঘরকে পর করে ভবঘুরে হয়ে বেরোতে পারবোনা কোনোদিন।