তানোরের কৃত্রিম সার সংকট!
তানোরে বোরো চাষ-আবাদে উৎপাদন হ্রাসের আশঙ্কা!
(তানোরের কৃত্রিম সার সংক)!
তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি; জাকির হোসেন।
রাজশাহীর তানোরে একশ্রেণীর সার ডিলারের বিরুদ্ধে ইউরিয়া সার কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, অধিকাংশ ডিলার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী মতাদর্শী, তারা আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে কৃত্রিম সার সঙ্কটের সৃষ্টি করেছে।
জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে কৃষকদের সার নিয়ে ভুগতে হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও কৃষকদের অতিরিক্ত দামে সার কিনতে হয়েছে। এর ফলে আমন চাষে বিঘাপ্রতি বাড়তি খরচ হয়েছে এক থেকে দেড় হাজার টাকা। এ কারনে ধান উৎপাদনে উৎসাহ হারাচ্ছে কৃষক।
সামনে বোরো মৌসুম টার্গেট করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি কারিরা। গত দেড় যুগে যা ঘটে নাই, এবার সার সংকটের সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। বোরো চাষে কৃষকের সার সংগ্রহের ক্ষেত্রে, শুধু বোরো নয়” আলু চাষিরাও বাড়তি দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। গত বছর বাড়তি উৎপাদন করে ন্যায্য দাম না পেয়ে আলু চাষে উৎসাহ হারিয়েছে কৃষক। এমতাবস্থায় যদি বেশী দামে সার কিনতে হয়, তবে কৃষকের মাথায় ঋনের বোঝা চাপানো হবে।
এ বছর সার সংকটে উৎপাদন গত বছরের চেয়ে অন্তত ২৫ শতাংশ কম হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত দুই মাসে সব ধরনের রাসায়নিক সারের দাম বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। এর মধ্যে ডিএপি সারের ৫০ কেজির প্রতি বস্তায় ৫০০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি বস্তা সার বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ টাকায়। যা এক মাস আগেও ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হতো। সরকারনির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিএডিসির এমওপি প্রতি বস্তা ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৭৫০ টাকা এবং টিএসপি ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কেউ রশিদ দিচ্ছে না, রশিদ চাইলে সার দেয়া হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, এ বছর দেশে রাসায়নিক সারের বার্ষিক চাহিদা ধরা হয়েছে প্রায় ৫৭ লাখ ৮৫ হাজার টন। চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ বিভিন্ন দেশ থেকে সরকারিভাবে আমদানি করা হচ্ছে। বাকি ২০ শতাংশ দেশের কারখানা থেকে মেটানো হয়। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সারা দেশে জুলাই মাসের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত সার ডিলারদের কাছে সরবরাহ করার পরও ৬ লাখ ৩০ হাজার ৬১৩ টন ইউরিয়া সার মজুত রয়েছে। ২ লাখ ১৭ হাজার টন টিএসপি, ২ লাখ ৭৩ হাজার টন ডিএপি এবং ২ লাখ ৮১ হাজার টন এমওপি মজুত আছে। তারপরও কৃত্রিম সংকট কৃষকদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে। সার নিয়ে সংকটে কৃষকরা হতাশ। বোরো উৎপাদন ব্যাহত হলে চাল আমদানি বৃদ্ধি পাবে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, তানোরে বিসিআইসি’র সার ডিলার রয়েছে ৯ জন এবং বিএডিসি’র সার ডিলার রয়েছে ২২ জন। স্থানীয়রা জানান, তানোরের পাঁচন্দর ইউপির বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স প্রাইম টেড্রার্সের স্বত্বাধিকারী প্রণব কুমার সাহা। তিনি পাবনা জেলার বাসিন্দা। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনি কৌশলে তানোরের নাগরিকত্ব নিয়ে ডিলার নিয়োগ পেয়েছেন। তালন্দ ইউপির বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স সুমন টেড্রার্সের স্বত্ত্বাধিকারী সুমন
কুমার শীল। তিনিও পাবনা জেলার বাসিন্দা। তিনিও কৌশলে তানোরের নাগরিকত্ব নিয়ে ডিলার নিয়োগ পেয়েছে। বাধাইড় ইউপির বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স নাবিলা টেড্রার্সের স্বত্বাধিকারী আখেরুজ্জামান বাবু।তিনি নওগাঁ জেলার বাসিন্দা। তিনিও কৌশলে তানোরের নাগরিকত্ব নিয়ে ডিলার নিয়োগ পেয়েছেন।
স্থানীয় কৃষকেরা অভিযোগ করে বলেন, অধিকাংশ ডিলার বরাদ্দের পুরো সার এলাকায় নিয়ে না এসে মিলগেটে বিক্রি করে দেন। তারা বলেন, ডিলারগণ বরাদ্দের সার উত্তোলন করে গুদামে নেয়ার পর মজুদ ও বিক্রির সময় যদি গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে সরকারি কর্মকর্তাগণ দেখভাল করেন, তাহলে ডিলারদের অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।