মোঃ রিপন শেখ ভাঙ্গা ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনে নগরকান্দার সঙ্গে যুক্ত করার গেজেট প্রকাশের প্রতিবাদে আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে ভাঙ্গা। মাত্র দশ দিনের ব্যবধানে বুধবার ১০ আগস্ট সকাল থেকে তৃতীয় দফায় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে হাজারো মানুষ।
সকাল ৮টার পর থেকেই ঢাকা-গোপালগঞ্জ-খুলনা-বরিশাল মহাসড়ক এবং ভাঙ্গা-ফরিদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন। টায়ার জ্বালানো, গাছ কেটে ফেলা ও ব্যারিকেড বসিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। এর ফলে রাজধানী ঢাকাসহ দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়ে। দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, পণ্যবাহী গাড়ি ও ব্যক্তিগত গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হয়। যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন এবং এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং তারা বলেন, ভুল ছিল নির্বাচন কমিশনারের আমরা কেনো সাধারণ জনগণ হয়রানি শিকার হচ্ছি।
তবে মানবিক কারণে আন্দোলনকারীরা অ্যাম্বুলেন্স ও বিদেশগামী যাত্রীবাহী গাড়িকে চলাচলের অনুমতি দেন। এছাড়া শিশু ও অসুস্থ যাত্রীদের জন্য স্থানীয়ভাবে পানীয় জল ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়।
অবরোধ চলাকালে কয়েক দফায় মিছিল ও স্লোগান শোনা যায়। বিক্ষুব্ধ জনতা স্লোগান দেন—
“ভাঙ্গার আমার মা এক ইঞ্চি মাটিও নগরকান্দার সাথে মিশতে দেওয়া হবে না।”
“রক্ত লাগলে রক্ত নে, ভাঙ্গাবাসীকে দুই ইউনিয়ন ফেরত দে।”
“ভাঙ্গার অঙ্গহানি চলবে না, অ্যাকশন, অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন।”নির্দিষ্টকালের জন্য দক্ষিণ বঙ্গের সাথে ঢাকা যোগাযোগ অচল করার হুঁশিয়ার দেয় বিক্ষোভ জনতা।
তাদের দাবি, ভাঙ্গা উপজেলার ঐতিহ্য ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারা ঘোষণা দেন, প্রয়োজনে এই আন্দোলন আরও কঠোর করা হবে।
অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে ভাঙ্গার আলগী ইউনিয়নের সুয়াদি, হামিরদীর মুনসুরাবাদ ও হামিরদী বাজার, মানিকদহ ইউনিয়নের পুকুরিয়া এবং ভাঙ্গা পৌরসভার হাসপাতাল মোড়ে হাজার হাজার মানুষ অবস্থান নেন। স্থানীয়ভাবে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে মানুষ মিছিল নিয়ে মহাসড়কে এসে যুক্ত হন। এতে পুরো এলাকা এক সময় জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
স্থানীয়
অংশগ্রহণকারীরা বলেন, নির্বাচন কমিশন ভাঙ্গার জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে তড়িঘড়ি করে গেজেট প্রকাশ করেছে। এতে দুই ইউনিয়নের মানুষের আত্মপরিচয় ও ভৌগোলিক অবস্থান বদলে যাচ্ছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
একজন আন্দোলনকারী জানান, “আমরা আমাদের মাটি ও অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনে নেমেছি। প্রয়োজনে রক্ত দেবো, কিন্তু ইউনিয়ন ছাড়বো না।
উল্লেখ্য, এর আগে গত সপ্তাহে দুই দফায় একই দাবিতে ভাঙ্গার মানুষ সড়ক অবরোধ করেছিলেন। কিন্তু সরকার বা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় আন্দোলনকারীরা আরও বেগবান হয়েছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এভাবে অবহেলা চলতে থাকলে তারা অনির্দিষ্টকালের কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবেন।
অবরোধের কারণে দক্ষিণবঙ্গমুখী সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় ব্যাপক অচলাবস্থা দেখা দেয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মহাসড়কে আটকে থাকা যানবাহনের সারি কয়েক কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়। যাত্রীরা হাটতে বাধ্য হন। অনেক ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে বিপাকে পড়েন।
অবশেষে আন্দোলনকারীদের খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সরবরাহের ব্যবস্থার মধ্যেই দিনভর অবরোধ কর্মসূচি চলে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
স্থানীয় রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সরকার দ্রুত সমাধান না করলে ভাঙ্গায় এই আন্দোলন আরও বিস্তৃত আকার ধারণ করতে পারে। ইতোমধ্যে আন্দোলনের ডাক ছড়িয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নগুলোতেও। ভাঙ্গাবাসীর স্লোগান— “ভাঙ্গার দুই ইউনিয়ন ফেরত চাই।”—এখন হয়ে উঠেছে পুরো আন্দোলনের মূলমন্ত্র।